Read more
বইয়ের নামঃ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড
লেখকঃ ড. শামসুল আরেফিন
প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আযহার
বিষয়ঃ অন্ধকার থেকে আলোতে
পৃষ্ঠাঃ ১৬০
বিনিময় মূল্যঃ ১৭০ টাকা
∎ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে পাঠয়েছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য।মানুষকে দান করেছেন উত্তম জ্ঞান, বিবেচনাশক্তি,যার দ্বারা মানুষ স্রষ্টাকে চিনতে পারেন,তার ইবাদাতে মশগুল থাকতে পারেন। বর্তমান যুগে তরুনদের মধ্যে এক প্রকার সংশয়ের বীজ তৈরী হয়েছে,তারা আল্লাহ ইবাদাতকে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া কোনো বস্তু মনে করেন,নিশ্চয়ই তারা পরকাল সম্বন্ধে উদাসীন।তারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে নিজেদের ইচ্ছামতো চলেন এবং ধর্মের ভুল খুঁজে বেড়ান।বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে তারা প্রমান করতে চায় যে,'সৃষ্টিকর্তা নেই'।তারা মানুষকে সৃষ্টিকর্তার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে নাস্তিকতার দিকে আহ্বান করে,অবশেষে নিজেদেরকে পরিচয় দেয় নাস্তিক নামে।
∎ সাজিদ সিরিজ পড়ে তরুনরা সাজিদের মতো বই আরো বেশি বেশি খুঁজেছেন, তাদের জন্য পরিপূরক হিসেবে 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' একটা চমৎকার বই।
∎ আমি নিজেই কিছু প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত খুঁজছিলাম, সেই উত্তরগুলো চমৎকার এবং সহজবোধ্যভাবে পেলাম এই 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' বইয়ে।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
∎ বইটার প্রচ্ছদ (কাভার পেইজ) এর মানে টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ - একটি চশমার ছবি। বাম সাইডের ফ্রেমটা ভাঙা। যা বাম তথা নাস্তিকদের নির্দেশ করে। যে ফ্রেম দ্বারা নাস্তিকরা দুনিয়াকে, ধর্মকে দেখতো - সে ফ্রেমকে লেখক ভেঙে দিয়েছেন।
∎ বইয়ের বিষয়বস্তুগুলো (কন্টেন্ট) আপনার মন জয় করবে । বইটি মোট ১১ টি (এগারটি) গল্প দিয়ে সাজানো।প্রতিটি গল্পের উপস্থাপনই যেনো সংশয়ের বিরুদ্ধে একেকটি ধারালো তরবারি।
∎ প্রতিটি গল্পই আলাদা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ বড় রিভিউর দাবি রাখে।চেষ্টা করছি কয়েকটি অনুচ্ছেদ আলোচনা করারঃ-
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
∎নাস্তিকদের একটি কমন প্রশ্ন হলো- "স্রষ্টা যে আছেন তার প্রমান কি?
নাস্তিকদের এই অবিশ্বাসের জালকে কচুকাটা করেছেন লেখক এই গল্পে,যা ভেঙে দেবে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের সন্দেহের কঠিন প্রাচীর।
∎কোরআনুল কারীমে আছে - ‘আল্লাযীনা ইউ'মিনুনা বিল গায়েবী’ - এরা তো তারাই, যারা না দেখে বিশ্বাস করে।
স্রষ্টার অস্তিত্ব আমরা আমাদের চারপাশে প্রকৃতির দিকে তাকালেই তো বুঝতে পারি,"কোথায় নেই তিনি? তিনি যে নেই তার কোনো প্রমান আছে?"এ জন্য মোটা মোটা বই পড়ার দরকার নেই,বিচক্ষণতা দিয়েই ভাগ্যবানরা খুজে নেয় সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আলামীন কে।
∎ধোয়া এবং আগুনের চমৎকার একটি উদাহরণ লেখক ব্যবহার করেছেন স্রষ্টাকে না দেখে বিশ্বাস প্রসঙ্গে। এছাড়াও বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে সৃষ্টাকে খুঁজে পাওয়ার মাধ্যম এই অংশে দেখানো হয়েছে। আশা করি, অবিশ্বাসীর সংশয় দূর হবে।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
∎নাস্তিকদের আরো একটি চুলকানিমূলক প্রশ্ন হলো,"ইসলাম কেনো দাসপ্রথা সমর্থন করে?"আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি সঠিক উত্তর পেয়েছি।
∎নবীজী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর সময়ে যুদ্ধেপরাজিত,যুদ্ধে বন্দি সৈন্যদের জেলে বন্দী না করে তাদেরকে কৃষিকাজে অংশগ্রহণ,ভরণপোষণ,বিয়েশাদীর ব্যাবস্থা করা এবং মুসলমানদের জীবনযাপনে মুগ্ধ হয়ে তারা যেনো ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন,পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বেঁচে যায়।
∎ ইসলামধর্মে বলা হয়েছে-
মনিব যা খাবে-যেই পোষাক পরবে,দাসও তাই খাবে,তাই পরবে।দাসকে "আমার বালক/আমার খাদিম" বলে সম্বোধন করতে হবে। প্রতিদিন একজন দাসের ৭০ টি ভুল ক্ষমা করতে বলেছেন।
∎তখনকার সময়ে ঐসকল দাসেরা পড়াশুনায়ও অনেক উন্নতি করেছিলেন। ইকরিমা (রহঃ) নামের এক দাস "বাহরুল উম্মাহ"(জাতির বিদ্যাসাগর) উপাধি লাভ করেন।
নবীজী(সঃ) বলেন,"যে নিজের দাসের সাথে দুর্ব্যবহার করবে,সে জান্নাতে যাবে না"।
এইভাবে দাসত্বকে চিরতরে বিলীন করাই ইসলামের উদ্দেশ্য।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
কুরআনে নারীদের শষ্যক্ষেত্র বলা হয়েছে-এ নিয়েও নাস্তিক এবং নারীবাদীদের সমস্যা।এর ব্যাখা আর তারা জানে না,বুঝতেও চায় না।
∎ক্ষেতের ফসল যেমন চাষীর ভবিষ্যতের পাথেয়।ঠিক তেমনি স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানই পুরুষের বৃদ্ধবয়সের অবলম্বন।
∎চাষী যেমন শষ্যক্ষেত্রের যত্ন নেয়,সেচ দেয়,সারাদিন ক্ষেতেই ব্যয় করেন। স্বামীও তেমন স্ত্রীর যত্ন নেবেন,রোগশোকে পাশে থেকে যত্ন করবেন।
∎সবশেষে ওই জমিটুকুই চাষীর সম্বল, তার দুনিয়া,পরম নির্ভরতা ও আবেগের জায়গা।ঠিক তেমনি স্ত্রীও তার স্বামীর গর্বের ধন,তার আশ্রয়-সম্বল, স্ত্রী স্বামীর কাছে তার দুনিয়া,তার সবকিছু।
∎ইসলামই প্রথম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে।
আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
অনেকেই ভাবেন ইসলাম হলো আরব সংস্কৃতি।কিন্তু না ইসলাম একটি সতন্ত্র সংস্কৃতি।
∎জোব্বা -বোরখা শুধু আরবরাই পরে না। ইহুদী র্যাবাই,চার্চেরফাদার,পোপদের সাদা গোল টুপি,যীশুর ছবিতে দাড়ি, জোব্বা,রেনেসার শিল্পকলাতে মাদার মেরীকেও হিযাব পরিহিত দেখা যায়। খৎনা ইহুদীরাও করে থাকেন।
∎২২ টা আরব দেশের সবার ভাষা নবীজীর সময় একই(আরবি) ছিলো না। মিশরে কপটিক, ফিলিস্তানে হিব্রু,সিরিয়ায় আরামায়িক ভাষা ছিলো।২৫ জন নবীর ৪ জন শুধু আরবের।
∎ ইসলাম এসে পুরো আরব সংস্কৃতির বর্বরতা,কন্যাসন্তান হত্যা,মূর্তিপূজা দূর করে এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, আরব সংস্কৃতিকে পুরোপুরি সংশোধন করে।তাই ইসলাম একটি সতন্ত্র সংস্কৃতি।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
∎বইটির লেখক একজন এ ডাক্তার মানুষ। কিন্তু, মাশআল্লাহ্ বইটি পড়ার পর উনার জন্য ভক্তি শ্রদ্ধায় মনটা ভরে গেলো। আর কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে রসিয়ে রসিয়ে লিখলে একজন পাঠকের নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাত সম্বন্ধে বুঝে আসবে, জানিনা। কিন্তু এটা জানি যে এবং বিশ্বাস করি, এই বইটা পড়লে আপনার মধ্যে নবীপ্রেম সৃষ্টি হবে, সুন্নাতকে নিয়ে আপনি নতুন করে ভাবতে বসবেন, এবং আল্লাহ্ চাইলে সুন্নাত পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আল্লাহ্ লেখককে উত্তম জাযা দান করুক।
∎লেখক 'ড. শামসুল আরেফীন' খুবই সহজ-সরল,প্রাঞ্জল এবং বোধগম্য ভাষায় ছোটগল্প আকারে সাজিয়েছেন তার 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' বইটিকে।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
বই এর যেই বিষয়গুলো আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে-
∎বইটির প্রচ্ছদঃ
বইটির প্রচ্ছদটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। এখানে বাম চোখের চশমা ভাঙ্গা কিংবা গুলি করা হয়েছে।যা বাম তথা নাস্তিকদের নির্দেশ করে। যে ফ্রেম দ্বারা নাস্তিকরা দুনিয়াকে, ধর্মকে দেখতো, সে ফ্রেমকে লেখক ভেঙে দিয়েছেন।
∎বই এর নামকরণঃ
নাস্তিকতা সংশয়বাদের ভিত্তি ই জড়িত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এর উপর, যেখানে নিজের অস্তিত্বের সত্যতা কে অস্বীকার করে প্রতিনিয়ত নিজেকে বিদ্রুপ করা হয়।
∎ বইয়ের মধ্যে পাঠককে ধরে রাখতে পারা লেখকের অন্যতম প্রধান একটি গুণাবলী। এক্ষেত্রে লেখক সফল হয়েছেন।
∎বইটির আরেকটা জিনিস ভালো লাগছে, বইটির প্রায় লাইনে লাইনে রেফারেন্স দেবার চেষ্টা করেছেন লেখক। প্রতিটি গল্প রেফারেন্সে ভরপুর।
∎একে বই না বলে একটি ছোটোখাটো জ্ঞানকোষ বলা যায়।এতো এতো তথ্য ঠাসা এখানে,আপনি চমকে যাবেন,হয়তো বলে উঠবেন এভাবে আগে আমি কেন ভাবিনি!
❐যে বিষয়গুলো যেই ব্যাপারগুলো নেগেটিভ মনে হয়েছে-
∎রেফারেন্সগুলো এভাবে দেয়া হয়েছে যেনো দেখে মনে হয়, এটা নিজেই আরেকটা গল্প! আরো সংক্ষিপ্ত, ছোট ফন্টে দেয়া যেতো।
∎প্রথম বই হিসেবে কিছু ভুল থাকা স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে প্রিন্টিং এ ভুল কিছুটা দৃষ্টিকটু লেগেছে, যদিও তা লেখকের দোষ নয়।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
∎যাদের মনে সংশয়ের ছায়া পড়েছে,যাদের মন ইসলামের কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায়, দ্বীনের পথে মন অটুট রাখতে কষ্ট হচ্ছে; তাদের জন্যই এই বই।সব বয়সের মানুষ বইটি পড়তে পারবেন।
সংশয়বাদে জর্জরিত, মুসলিম,অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের জন্য বইটি পড়া আবশ্যক । তবে উগ্র অন্ধ নাস্তিকদের জন্য অবশ্য কোন টনিকেই কাজ হবার নয়, কারণ তারা নফসের দাসত্বের কাছে আল্লাহর দাসত্বকে চিরতরে বিক্রি করে দিয়েছে।
তাই,
▣ যদি প্রাকটিসিং মুসলিম হন- তৃপ্তির আবেশে হৃদয় প্রশান্ত করুন।
▣ যদি হন নন প্রাকটিসিং - কি পেয়ে পায়ে ঠেলছেন দেখুন
▣ হন যদি অবিশ্বাসী- উদ্ধৃত সাহসে গ্রহন করুন
▣ কিংবা যদি হন অমুসলিম- কৌতুহলে হাতে নিন
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
পুরো নাম- শামসুল আরেফিন শক্তি। তিনি একজন ডাক্তার। শুরুতে তিনি প্রাকটিসিং মুসলমান ছিলেন না। অত:পর আল্লাহ তাকে হিদায়াত দান করেন। এটা তার প্রথম রচিত বই।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
ডাবল স্ট্যান্ডার্ড" বইটি সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি অনলাইনের মাধ্যমে। কোয়ারেন্টাইনে বাসায় বসে বইটি পড়ি। এক কথায় বলতে গেলে এমন বই আমি আগে পড়িনি,এতো স্মার্ট চিন্তা,ভাবনা যুক্তি দেখে আমি বিস্মিত।আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ্।
∎কয়েকটি গল্পই আমাকে মুগ্ধ করেছে।তার মধ্যে- দাসপ্রথা, শ্রেনীবৈষম্যহীন সমাজ,ইসলাম কি আরব সংস্কৃতি,পরিপূর্ন দাড়ি গল্পগুলো।সত্যিই অসাধারণ।
∎অন্ধকারের গোলকধাঁধায় বিভ্রান্ত, দিশেহারা প্রজন্মকে ইসলাম এর সঠিক বার্তাটি যুগপোযোগী, সুন্দর, যৌক্তিক উপায়ে গল্প আকারে তুলে ধরতে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মাঝে ডা শামসুল আরেফিন ভাই অন্যতম।
∎ লেখকের লেখনীর প্রশংসা করতে হয় এই
কারণে যে, প্রতিটি গল্পই সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগের এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে একসাথে দেখানো হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা
লেখককে উত্তম মর্যাদায় ভূষিত করুন।
বইটিকে ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে কবুল
করুন। লেখকের কলমের জোরকে
আরো শাণিত করুন। আমিন।
রিভিউ রিখেছেন Hasnain Islam Emon
রিভিউ সংগ্রহ করা হয়েছে এখান থেকে



0 Reviews