Read more
বুক রিভিউ : "শিকড়ের সন্ধানে"
লেখিকা: হামিদা মুবাশ্বেরা
প্রকাশনী:সমকালীন প্রকাশনী
লিখেছেন-- মর্তুজা শাহরিয়ার
আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহর নিকট আমি শুকরিয়া জ্ঞাপন করি এই বইটা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে যেখানে আমার নিজের কোনো কর্তৃত্ব নেই, পুরোটাই আমার রবের অনুগ্রহ। আমাদের পক্ষে সেটুকুই জানা সম্ভব যতটুক তিনি আমাদেরকে অনুমতি দেন।
এই বইটার রিভিউ হয়তোবা একটু বেশি বড় হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হলো বইটার বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং বইটি পড়ে আমি ভীষণভাবে আলোড়িত।
তবে বক্তব্যকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আমি দুইটি ভাগে এই রিভিউটি লিখছি।
প্রথম ভাগ
আমরা আল ক্বুরআন পড়ি। তবে এই পড়ার মধ্যে আবার অনেক ব্যাপার আছে। কেউ শুধু আরবী তিলাওয়াত করেন। অর্থ পড়া হয় না। কেউ তিলাওয়াত করেন আবার একই সাথে বাংলা তর্জমাও পড়ে থাকেন। আর কেউ তিলাওয়াত করেন, অর্থ পড়েন, একই সাথে তাফসীর ও পড়েন। আরেকটা গ্রুপ আছে অবশ্য যারা শুধু বাংলা অর্থ পড়েন।
এখন ক্বুরআন কে আমাদের নিকট পাঠানো হয়েছে বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করার জন্য এবং সেই শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার জন্য। একইভাবে বনী ঈসরাইলের নিকট তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল দেওয়া হয়েছিলো তাদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে।
কিন্তু তারা নিজেরা আল্লাহকে সঠিক ভাবে চিনতে পারেনি, নিজেদের প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতন তাদের ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি সাধন করে। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য, পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের বিকৃতি, নবী হত্যা এহেন এহেন জঘন্য অপরাধের জন্য ইহুদী জাতি একসময় আল্লাহর অভিশপ্ত জাতি হিসেবে পরিণত হয়। অন্যদিকে খ্রিষ্টান বা নাসারা যারা তারা নিজ ধর্ম গ্রন্থ থেকে বহু দূরে থেকে শুধু পাদ্রী যাজকদের কথা শুনেই আবেগ দিয়ে ধর্ম পালন করতে গিয়ে হয়ে পড়ে পথভ্রষ্ট, কেননা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী, পার্থিব সামান্য লাভের আশায় পাদ্রী, শাসকেরা জেনে শুনেই পবিত্র গ্রন্থের বিকৃতি সাধন করে।
আবার, আল্লাহপাক আমাদেরকে সূরা ফাতিহাতেই শিখিয়ে দিয়েছেন আমরা যেন দোয়া করি আল্লাহর কাছে যেন আমরা অভিশপ্ত কিংবা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত না হই।
এখন ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হলে আগে আমাদেরকে এটা জানা লাগবে কারা ক্ষতিগ্রস্ত,আর কেনইবা তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো! আর তাদের ইতিহাসই বা কি? যদি আমরা সম্যক ভাবে এই ব্যাপারে জ্ঞান না রাখি তবে নিজেরাও ভুল করে তাদের অন্তর্গত হয়ে যেতে পারি কারণ শয়তান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আল্লাহর সীরাতুল মুস্তাকিমে ওৎ পেতে থেকে মুমিনের ক্ষতি সাধনের জন্য।
আবার, আল ক্বুরআন এর বিভিন্ন যায়গায় আল্লাহ বনী ঈসরাইলের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তৎকালীন আরব সমাজ বনী ঈসরাইলের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবগত থাকায় তারা ব্যাপারগুলা সহজে বুঝলেও আমাদের জ্ঞান চর্চার অভাবে আমরা বেশিরভাগই এই ব্যাপারে সম্যক অবগত নই। কিন্তু আমাদের এই ব্যাপারে জানা খুবই প্রয়োজন।
আলহামদুলিল্লাহ, লেখিকা হামিদা মুবাশ্বেরা তাঁর বইটিতে বিস্তারিত ভাবে এসবকিছু নিয়ে লিখেছেন। আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিক এবং তাঁর কাজকে কবুল করুন, আমীন।
দ্বিতীয় অংশ
দুঃখ জনক হলেও সত্য যেসব কারণে আজ ইহুদী নাসারা জাতিকে অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সেই কারণগুলো আজকের মুসলিম সমাজেও ধীরে ধীরে অনেকাংশে লক্ষ করা যায়। আর তার পুরষ্কার দুনিয়াতে লাঞ্চনা এবং আখিরাতে আল্লাহর ক্ষমা না পেলে জাহান্নামের আগুন।
আমার নিজের কিছু ব্যাপার নিয়ে ফ্যাসিনেশন কাজ করে। তার মধ্যে একটি হলো মুসলমানদের গৌরবান্বিত ইতিহাস। একই সাথে আমি প্রায়ই নিজেদের অধঃপতন নিয়ে ভাবি কেন এরকম হলো! কিভাবে এর উত্তরণ সম্ভব! বইটি পড়তে গিয়ে আমি আমার উত্তর পেয়ে গিয়েছি। উত্তরটা স্পয়লার হিসেবে আর দিলাম না।পাঠকের জন্য রেখে দিলাম।
বইটা পড়তে গিয়ে বারবার একটা কথাই মনে হয়েছে আমার, যদি আমার কাছে অনেক টাকা থাকতো তবে যত জন মানুষকে আমি চিনি সবাইকে বইটা হাদিয়া দিতাম, মসজিদে মসজিদে বিলি করতাম। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নেই। তবে কেউ বইটা পড়ার জন্য ধার নিতে চাইলে তাকে স্বাগতম জানাই।
বইটি কিনুন। পড়ুন। অন্যকে পড়তে দিন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বই কেনা উত্তম, কারণ এইসব বই বেশি বেশি বিক্রি হলে যারা প্রকাশক তারা ভবিষ্যতে আরো ভালো ভালো বই প্রকাশ করতে উৎসাহিত হবে। দেশে ইসলামি সাহিত্যের একটা বিপ্লব শুরু হয়েছে। ব্যাপারটাকে প্রমোট করা প্রয়োজন।



0 Reviews