Read more
ডাক্তার শামসুল আরেফীন লিখিত 'কুররাতু আইয়ুন—১ যে জীবন জুড়ায় নয়ন' বইটা যতটা না বই, তারচে বেশি আলোচনা!
মানে সাদা সাদা পৃষ্ঠায় কালো কালো অক্ষরের বাইরে মনে হয় বাদ মাগরিব বয়ানের মতো দশ-পনেরো জনের হালকায় বসে কোনো এক হিতাকাঙ্ক্ষী জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন। আর টিকা লেখার মতো সেসব গল্প ও অভিজ্ঞতার শিক্ষা, প্রাপ্তিও বলে যাচ্ছেন৷
প্রায়ই মনে হতো এই বইয়ের একটা রিভিউ লিখব৷ কিন্তু এতদিনেও লেখা হয়নি৷ কারণ টা হলো যখনই লেখার জন্য বইটা হাতে নিতাম, সূচীর দিকে একটু চোখ বুলাতাম—আবার পড়তে ইচ্ছে হতো! ব্যাস! আবার পড়া শুরু করতাম, এটা, ওটা।
এই পাঠ, অই পাঠ৷ কী সুন্দর সাবলীল গল্প, গদ্য৷ ঝরঝরে ভাষা৷ পড়তে পড়তে আমার আর রিভিউ লেখা হয়ে ওঠে না৷ বড়জোড় নিজের ভালো লাগার কথা বলতে পারি৷
কুররাতু আইয়ুন বইয়ের নামের সাথে প্রচ্ছদ যেমন অদ্ভুত সুন্দর, তেমনই এর ভেতরের হালহকিকত আরও চমৎকার।
এই বইটা কাদের জন্য? দ্বীন-ধর্ম মেনে চলেন এমন প্রত্যেকের জন্যই!
পরিবারে কীভাবে একটা ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি করতে হয়, কীভাবে সেখানে কোমলপ্রাণ শিশুদের তারবিয়াত হবে, সেই শিশুর মা বাবা কেমন হবে, সেই বাবা-মার অভিভাবক যাঁরা, তাঁদের কী করণীয়... সবই বলা হয়েছে চমৎকার ভঙ্গিতে।
লেখক এখানে সরাসরি আপনার জন্য আবশ্যক ১০টি কাজ—টাইপের আলাপ না করে সেই লোকের গল্প বলেছেন, যে এই ১০টি কাজ করে। সে কীভাবে দ্বীনের জন্য মেহনত করে, ফিকির করে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক
মা-বাবার সম্পর্ক
বন্ধু-স্বজনদের সম্পর্ক... এই সবকিছুর উদ্দেশ্য তো একটাই, রেজায়ে খোদাবন্দ! ডাক্তার শামসুল আরেফীন কীভাবে এই সম্পর্কগুলোর উন্নতি করা যায়, কীভাবে নিত্যকার এই সম্পর্ককেই আমরা জান্নাতের পাথেয় বানাতে পারি, সেইসব বলেছেন৷
মানে পরিবার গঠন, সমাজ গঠন, ধর্মপালন; মোটকথা আপনার ইসলামি লাইফস্টাইল কীরকম হবে, কীরকম হওয়া উচিত, সেসবের প্রায়োগিক গাইডলাইন এই বই।
শুধু প্রশংসা করছি, কারণ বইটা এমনই যে প্রশংসাই করা যায় শুধু৷ আরেকটি বিশেষত্ব হলো এই বইটা দীর্ঘদিন টিকে থাকবে৷ শুধু এই বই না, মূলত টিকে যাবে শামসুল আরেফীনের চিন্তা ও মননের এইসব ধারাভাষ্য।
এই সময়কে তিনি আত্মস্থ করতে পারছেন, পড়তে পারছেন, ফলে জোয়ার নেমে গেলেও যেমন ডাঙায় কিছু জিনিশ থেকে যায়, তেমনই লেখকের এসকল কাজ থেকে যাবে, মানুষের জীবন ও যাপনে। কারণ লেখক চিন্তা করেছেন কীভাবে প্রান্তিকতা এড়িয়ে দ্বীন সামলে নেয়া যায়, অবশিষ্ট সময়টুকু অযথা যুক্তি-তর্কের দ্বন্দ্বে না গিয়ে মৌলিক দাওয়াহর কাজ করা যায়।
ব্যাস, এতটুকুই৷ আর এই সাধারণ ব্যাপারগুলোই মানুষ দীর্ঘদিন বহন করে৷ একটা গ্রাম দুই-একটা পরিবার যদি ঠিকঠাক হয়ে যায়, এবং তারাও টুকটাক ফিকির করতে পারে... ইনশাআল্লাহ সেখানে আলো জ্বলবেই। পাহাড়ে শহীদ ওমর ফারুকের জীবন আমরা দেখতে পারি। ভারি ভারি যুক্তিতর্ক, প্রতিরোধ-প্রতিবাদ এড়িয়ে সাধ্যমতো নিজে দ্বীন পালন করা৷ আশেপাশে সেই দাওয়াত পৌঁছে দেয়া।
জিন্দেগীর সাদামাটা সফর, কিন্তু সেই সফর যেখানে শেষ হলো, ওমর ফারুকের নতুন ইতিহাস সেখান থেকেই আবার শুরু হলো। কামিয়াবি কখন কীভাবে আসে আল্লাহ মালুম।
আল্লাহ পাক আমাদের তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন৷ পরিবার-সমাজে আরোও দুই-দশজনের দ্বীনদার, আমলদার হওয়ার মাধ্যম হিসাবে কবুল করুন৷ এই বইয়ের লেখক-পাঠককে উত্তম জাযা দিন।




0 Reviews